ন্যায়বিচার চেয়ে পুলিশের হ্যাশট্যাগ

Passenger Voice    |    ১০:৩৯ এএম, ২০২১-১২-১৯


ন্যায়বিচার চেয়ে পুলিশের হ্যাশট্যাগ

‘জাস্টিস ফর মহুয়া। জাস্টিস ফর ফাদার।’ ফেসবুকে ন্যায়বিচার চেয়ে এমন হ্যাশট্যাগ দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। পোস্টের সঙ্গে দেখা যাবে মহুয়া হাজং ও তার বাবার একটি ছবি। তাদের কেউ মহুয়ার সহকর্মী, কেউ সমব্যথী। মহুয়ার জন্য ন্যায়বিচার চাওয়ার পোস্টের মন্তব্যে অনেক সাধারণ মানুষকেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সনেট শিকদার নামে একজন পুলিশ সার্জেন্ট তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার শক্তিটুকু আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ। আমি আমার অবস্থানটা পরিষ্কার করলাম। একজন সহকর্মী, একজন ভাই হিসেবে আমি মহুয়ার পাশে আছি। একজন সন্তান হিসেবে আমি একজন পিতার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই। থানায় কেন মামলা নেওয়া হলো না তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও চাই।’

১৫ ডিসেম্বর দেওয়া তার এই স্ট্যাটাস একাধিকবার শেয়ার হয়েছে এবং অনেকেই মন্তব্য করেছেন। জুয়েল মাহমুদ নামে একজন কনস্টেবল মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের কাছে খুব অসহায়।’

হোসেইন আবিদ নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ক্ষমতার বিপরীতে একজন পুলিশের পরিবারের সঙ্গে এমন হলে সেখানে জনগণের অবস্থা ডাল-ভাত, এটা সবার জানা কথা।’

তিনি আরও লেখেন, ‘ভিআইপি পরিবারের সালমান খানগুলো দুষ্ট পানি খেয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যাবে। আর আমরা বিচার চাই বলে জোর আওয়াজ তুলবো, ততক্ষণে বেগম পাড়ার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট ছেড়ে যাবে।’

মাসুম বিল্লাহ নামে অপর একজন সার্জেন্ট সনেটের দেওয়া স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন, ‘একজন পুলিশ সদস্য নিজেই বিচারের দাবিতে পুলিশের দরজায় ঘুরবে, তা কী করে হয়!’

সাবাব এম আলী নামে একজন লিখেছেন, ‘ন্যায়বিচারের একটা প্লেট জাদুঘরে সাজিয়ে রাখার দিন এসে গেছে। কারণ এটা বিলুপ্তপ্রায়।’ মো. আতিকুর রহমান লিখেছেন, ‘সাধারণ জনগণ হিসেবে আমিও পাশে আছি।’ সার্জেন্ট সনেট শিকদারের স্ট্যাটাসে একমত পোষণ করে মন্তব্য করেছেন সার্জেন্ট তানজিলা পিয়াস।

মহুয়া ও তার বাবার একটি ছবি পোস্ট করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পান্না আক্তার নামে ডিএমপির অপর এক সার্জেন্ট। ছবিটিতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘স্টে উইথ মহুয়া। ‘আমি ও আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী।’

পান্না আক্তারের স্ট্যাটাসেও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। মো. কামরুল হাসান নামের একজন লিখেছেন, ‘এটার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা দায়ী। কারণ তারা ভোগে। তাই নিজের প্রতি নিজেরাই অবিচার করে। এর জন্য কর্মকর্তারা দায়ী। সাধারণ সিপাহি থেকে এসআই পর্যন্ত কেউই থানায় গিয়ে ওসি সাহেবদের কাছে বিচার পায় না। এর জন্য বিভাগীয় প্রধান ডিআইজি স্যারের কাছে যেতে হয়। আপনি থানার একজন ওসি। আপনার কাজ মামলা নেওয়া। আপনি মামলা না নিয়ে উল্টো পুলিশ সদস্যদের বকাঝকা করেন। ভয় দেখান। এটা ঠিক না। সবার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’

মো. সিদ্দিক নামে একজন পুলিশ সদস্য লিখেছেন, ‘এর বিচার চাই। অবিলম্বে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

মিজানুর রহমান নামে একজন জানতে চেয়ে লিখেছেন, ‘যদি আপনারা ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন করেন, তাহলে আমরা সাধারণ জনগণ কী করবো?’

গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি সড়কে একটি দ্রুতগতির গাড়ির চাপায় আহত হন সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা মনোরঞ্জন হাজং। তাকে উদ্ধার করে শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। গুরুতর অবস্থার কারণে অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এরপর শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মনোরঞ্জন হাজং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার। তার মেয়ে মহুয়া হাজং ট্রাফিক সার্জেন্ট হিসেবে ডিএমপিতে কর্মরত। দুর্ঘটনার পর তিনি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। এমনকি ঘটনার পর পথচারীরা চাপা দেওয়া সেই গাড়ি ও চালকসহ অন্য যাত্রীদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তারা ছাড়া পেয়ে যায়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে চালকের আসনে ছিলেন বিচারপতি রেজাউল হাসানের ছেলে সাইফ হাসান। তার স্ত্রী অন্তরা সাইফ আর বন্ধু রোয়াদও গাড়িতে ছিলেন। দুর্ঘটনার পরই প্রভাবশালীদের চাপে গাড়ি ও এর যাত্রীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। একইসঙ্গে তারা মহুয়া হাজংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আপসের চেষ্টাও চালায়। কিন্তু মহুয়া হাজং মামলার বিষয়ে অটল থাকায় এবং গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও ক্ষুব্ধ হন।

পরে বনানী থানা মহুয়া হাজংয়ের মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করলেও আসামিদের অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়। এজাহারে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

৯৮ ধারায় বেপরোয়া গতি ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর অপরাধে চালকের অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ১০৫ ধারা অনুযায়ী দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বা মারা গেলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।

এদিকে মামলা নিয়ে মুখ খুলেও চাপে পড়েছেন মহুয়া হাজং। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে মৌখিকভাবে নিষেধ করেছেন বলে জানা গেছে।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া বলেন, ‘দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ করছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’